স্পোর্টস ডেস্ক: বর্তমান সময়ে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিকেটার কে? চোখবন্ধ করে বলে দেওয়া যাবে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্কার নাম। সর্বশেষ লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগের কথাই ধরা যাক, নিজ ফ্রাঞ্চাইজিকে শিরোপা জিতিয়েছিলেনই, সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ও সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক এমনকী সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডও নিজের দখলে নেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেও লঙ্কানদের বড় ভরসার নাম হাসারাঙ্গা। জিম্বাবুয়ের মাটিতে ভারত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ব্যাট-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। অথচ এই তারকা স্পিন অলরাউন্ডারকে ছাড়াই এশিয়া কাপে খেলতে নামতে হয় লঙ্কানদের।
শুধু হাসারাঙ্গা নন, চোটের কারণে তিন পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা, দুষ্মন্ত চামিরা ও লাহিরু কুমারাকেও হারায় এবারের আসরের সহ-আয়োজক দেশটি। টুর্নামেন্ট শুরুর একদিন আগে টেনেটুনে কোনোরকমে স্কোয়াড ঘোষণা করে দাসুন শানাকাদের। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলেও তেমন একটা লাইমলাইটে ছিল না শ্রীলঙ্কার নাম। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে সবার নজর ছিল মূলত ভারত ও পাকিস্তানকে ঘিরেই। এ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের লড়াই ঘিরে মানুষের বাড়তি উন্মাদনাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটতে চেয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলও (এসিসি)।
সর্বশেষ কয়েকটি আসরে এশিয়া কাপের সূচি এমনভাবে ফেলা হয়েছে, যাতে ভারত-পাকিস্তান একাধিকবার মুখোমুখি হতে পারে। চলতি আসরেও সুযোগ ছিল তিনবার মুখোমুখি হওয়ার। গ্রুপপর্ব এবং সুপার ফোরের পর ভারত ফাইনালে উঠলেও লঙ্কানদের কাছে হেরে ছিটকে গেছে পাকিস্তান। ক্রীড়াবোদ্ধাদের তেমন সমীহ না পাওয়া শ্রীলঙ্কা টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করেছে।
যেভাবে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা
ঘরের মাঠ কলম্বোতে বাংলাদেশকে ২১ রানে হারিয়ে সুপার ফোর পর্ব শুরু করে শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান করেছিল স্বাগতিক দলটি। এরপর বাংলাদেশকে ২৩৬ রানেই আটকে দেয় লঙ্কান বোলাররা। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ২ রানের জয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করে দাসুন শানাকারা। প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ২৯১ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় হারের পর টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে কঠিন সমীকরণ মেলাতে হতো আফগানিস্তানকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুধু জয়ই যথেষ্ট ছিল না। রানরেটের হিসাব-নিকাশও মেলাতে হতো আফগানিস্তানকে সুপার ফোরে যেতে হলে ৩৭.১ ওভারের মধ্যেই নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে হতো। সেটা শেষ পর্যন্ত পারেনি তারা নিজেদের হিসেবের গড়মিলে। ৩৭.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৮৯ রানে থেমেছে আফগানরা।
সুপার ফোরে বাংলাদেশকে আরেকবার হারায় লঙ্কানরা। এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে আশা জাগিয়েও জয়ের দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করে শ্রীলঙ্কা। ভারতের কাছে ৪১ রানে হেরে যায় লঙ্কানরা। তবে এদিন ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন-আপকে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছেন দুই স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে ও চারিথ আসালঙ্কা। দুই স্পিনারের ঘূর্ণিতে মাত্র ২১৩ রানেই গুটিয়ে যায় ভারত। জবাবে ব্যাটাররা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে না পারায় ১৭২ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হারে লঙ্কানরা। যদিও ব্যাট হাতে শেষ পর্যন্ত লড়াইটা চালিয়ে গেছেন ওয়েল্লালাগে। হেরেও ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন।
ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করায় এবং বাংলাদেশ টানা দুই হারে ছিটকে যাওয়ায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) পাকিস্তান বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি ছিল অঘোষিত সেমিফাইনাল। বৃষ্টিবিঘ্নিত নাটকীয় এক ম্যাচে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট কাটে লঙ্কানরা।
হার না মানা মানসিকতাতেই বাজিমাত লঙ্কানদের
পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের একাদশের অন্তত সাতজন পঞ্চাশেরও কম ওয়ানডে খেলেছেন। ৫০ ওয়ানডের বেশি খেলার অভিজ্ঞতা আছে কেবল অধিনায়ক দাসুন শানাকা আর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার। এছাড়া একশ’র বেশি ওয়ানডে খেলেছেন এমন ক্রিকেটার ছিলেন দুজন-কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা।
শ্রীলঙ্কা দলে নামের ভার নাই, অভিজ্ঞতাও বেশি না। তবে কার্যকরী ও বুদ্ধিমান ক্রিকেটার আছে। এছাড়া আছে দলের জন্য উজাড় করে খেলার মানসিকতা। এই যেমন মাহেশ থিকসানার কথাই ধরা যাক-গতকালই জানা গিয়েছিল চোটে ভুগছেন তিনি। তবুও চোট যন্ত্রণা নিয়েই দলের জন্য লড়ে গেছেন।